সংবাদ শিরোনাম

 

বিয়ের আনন্দ মূহুর্তেই বিষাদে রূপ নিয়েছে পরিবারটির। আনন্দ পৌঁছাতে পারেনি ঢাকা পর্যন্ত। এর আগেই ময়মনসিংহের ত্রিশালের একটি দূর্ঘটনা কেঁড়ে নিল তাদের সব আনন্দ। জেলার ধোবাউড়া উপজেলা থেকে ভাতিজির বিয়েতে অংশগ্রহণ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় নিজ কর্মস্থলে ফিরছিলেন হোটেল ব্যবসায়ী আক্কাস আলী। রবিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাঙামাটি নামক স্থানে তাদের পরিবহন করা ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের বামপাশে খাদে ছিঁটকে পড়ে। সাথে সাথেই মাইক্রোবাসে থাকা সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আগুনে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় আক্কাস আলীর স্ত্রী দোলেনা খাতুন (৪০)। মুমুর্ষ অবস্থায় শতভাগ পুড়ে যাওয়া আক্কাস আলীকে ফায়ার সার্বিস কর্মীরা উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলেও অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় আক্কাস আলীর। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন আক্কাস আলীর বোনের জামাতা হান্নান মিয়া।

 

তিনি আরো জানান, ‘গত চারদিন আগে আক্কাস আলী ভাতিজির বিয়েতে অংশগ্রহণ করতে নিজ বাড়ি জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় আসেন তারা। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে বৌ-ভাত অনুষ্ঠান (ভাতিজির স্বামীর বাড়ি) থেকে ফিরে মাইক্রোবাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে এমন দূর্ঘটনায় মারা যায় আক্কাস আলীর স্ত্রী দোলেনা খাতুন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আক্কাস আলী নিজেও। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় আক্কাস আলীর ছেলে রনি মিয়া (১৮)। সে লাথি দিয়ে জানালার কাঁচ ভেঙে বাইরে বের হয়ে আসার কিছুক্ষণ পরই বিস্ফোরণ ঘটে মাইক্রোবাসটির। রনি মিয়ার বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, দূর্ঘটনায় পড়ার সাথে সাথে চালক পালিয়ে যায়। রনি তাঁর দগ্ধ বাবাকে গাড়ি থেকে বের করে পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়।’

 

অন্যদিকে তাদের প্রতিবেশী তোতা মিয়ার এক ছেলে ও দুই মেয়ে থাকেন রাজধানীর শাহজাদপুরে। সেখানে একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন তারা। ওই একই মাইক্রোবাসে করে ছেলে মেয়ের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি স্ত্রী রেজিয়া খাতুন (৪২), নাতি শিশু ইয়াসিনকে নিয়ে ধোবাউড়ার মুন্সিরহাট থেকে রওনা হন। মাঝ পথেই মাইক্রোবাসে আগুন লেগে পুড়ে মারা যান রেজিয়া। দগ্ধ হয়ে এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন অন্য দুইজনও।

 

নিহত রেজিয়ার মেয়ে মিনারা খাতুন জানান, আমার দুই বোন ও এক ভাই ঢাকার শাহজাদপুরে বাসায় থেকে চাকরি করে। গত রাতে ওই মাইক্রোবাসে করে বাবা-মা ও ভাগিনা ইয়াসিনকে নিয়ে আমার ভাই-বোনদের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিলো। পথে এমন দূর্ঘটনা ঘটলো।

 

ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ফিটনেস বিহীন ওই মাইক্রোবাসটিতে চালকসহ ১৪ জন যাত্রী ছিল। এ দূর্ঘটনায় হতাহতদের সবার বাড়িই ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায়। তাদের প্রত্যেকের পরিচয় মিলেছে।

ওদিকে চিকিৎসাধীন আহত আক্কাস আলীর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে পাঁচ জনে। তারা হলেন, ধোবাউড়া উপজেলার খামারভাসা গ্রামের আক্কাস আলী (৫২), তাঁর স্ত্রী দোলেনা খাতুন (৪৫), তোতা মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া খাতুন (৫৫), মুন্সিপাড়া গ্রামের মো. রুবেলের ছেলে আশিক মিয়া (৭) ও একই গ্রামের জরিনা আক্তার (৩৬)।

 

দগ্ধরা হলেন, তোতা মিয়া, আক্কাস আলী, তোতা মিয়ার নাতি ইয়াসিন (৩), একই ইউনিয়নের পূর্ব সালকোডা গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে রুবেল মিয়া (৩২) ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তার (২৬)।

 

ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন জানান, পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। গাড়ির চালক পলাতক রয়েছে। ধোবাউড়া উপজেলার মুন্সিরহাট থেকে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসে ঢাকায় যাওয়ার পথে ঘটনাস্থলে চারজনসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও সাতজন। গাড়িতে থাকা সিলিন্ডার গুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ ও টেম্পার আছে কি না এ গুলো পরীক্ষা না করেই ব্যবহার করায় এ ধরনের অগ্নিকা- গুলো ঘটছে।

 

জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফিন্সের সহকারী পরিচালক মাসুদ সর্দার বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দূর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাস থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় হস্তান্তর করে। আমরা ধারণা করছি, গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে সিলিন্ডার গ্যাস লিকেজ হয়ে গাড়িতে আগুন ধরে যায়।

 


মতামত জানান :

 
 
 
কপিরাইট © ময়মনসিংহ প্রতিদিন ডটকম - সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | উন্নয়নে হোস্টপিও.কম