সংবাদ শিরোনাম

 

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের কথা ছিল। এপ্রিল-মে মাসের আগে তা হচ্ছে না।
এরই মধ্যে পুরো প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৬.৫ শতাংশ। প্রকল্পের কমিশনিং সহ বিভিন্ন কাজও প্রায় শেষ।

প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. হারুনুর রশিদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, টানেলের ৯৬ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। মেকানিক্যাল কমিশনিংয়ের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। অ্যাপ্রোচ রোডের নির্মাণকাজও প্রায় শেষের পথে। টোল প্লাজা সংক্রান্ত ক্রস প্যাসেজ ও টানেলের নির্মাণ কাজ কিছুটা বাকি আছে।

 

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ টিউবের কাজ শেষ হলেও উত্তর টিউবের পূর্ত কাজসহ টানেলের বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক (ইলেকট্রো মেকানিক্যাল) কাজ চলমান। সব কাজ জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা। তাছাড়া টানেলের দুই প্রান্তে আধুনিক স্ক্যানার বসানো হবে। টানেল প্রকল্পের কার্যালয়, আবাসিক ভবন ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজও চলমান। পুরো কাজ শেষ হলেই যান চলাচলের উপযোগী হবে টানেল। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করতে পারবো। টানেল ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হলে সরকারের পক্ষ থেকে এটি উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

চীনা কোম্পানি-চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (সিসিসি) এর বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় দুই দফা। এতে টানেলের বর্তমানে মোট ব্যয় প্রায় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীন সরকার ‘জিটুজি’ অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর টানেল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শিং জিনপিং। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

প্রকল্পের শুরুতে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বরের একনেক সভায় প্রায় ১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রথমবার প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে ২০২০ সালে প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও আরও এক বছর ৬ মাস বাড়ানো হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি একনেক সভায় দ্বিতীয়বারের মত প্রকল্পের ব্যয় আরও ৩১৫ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এবার সময় বাড়ানো হয় এক বছর। ফলে সব মিলিয়ে এখন এই প্রকল্পে খরচ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা এবং প্র্রকল্পের মেয়াদের শেষ সময় চলতি বছরের ডিসেম্বর। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

 

এদিকে, প্রকল্প নিয়ে ২০১৩ সালে করা সমীক্ষা প্রতিবেদনে টানেল চালুর বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে বলে ধারণা দেওয়া হয়। সে হিসেবে দিনে চলতে পারে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজার যানবাহন চলবে। আর ২০৩০ সাল নাগাদ চলবে প্রায় ৩৭ হাজার এবং ২০৩৭ সালে চলবে এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন।

 

এরই মধ্যে টানেল ব্যবহারকারীদের জন্য টোল নির্ধারণ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। টানেল চালু হলে নির্ধারিত টোল পরিশোধ করে চলতে হবে যানবাহন। টানেলের ভেতর দিয়ে যেতে প্রাইভেট কার, জিপ ও পিকআপের জন্য দিতে হবে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য দিতে হবে ২৫০ টাকা। ৩১ বা তার চেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ টাকা এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের বাসের জন্য ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। ৫ টনের ট্রাক ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকের জন্য ৫০০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাক ৬০০ টাকা, ট্রাক (তিন এক্সেল) ৮০০ টাকা, ট্রেইলর (চার এক্সেল) ১০০০ টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি ট্রেইলরের জন্য ১ হাজার টাকার সাথে প্রতি এক্সেলের জন্য ২০০ টাকা বাড়তি টোল দিতে হবে।

 

৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অন্য টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক।

 


মতামত জানান :

 
 
 
কপিরাইট © ময়মনসিংহ প্রতিদিন ডটকম - সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | উন্নয়নে হোস্টপিও.কম